রংপুরের পীরগঞ্জে খেতাবেরপাড়া পল্লী মঙ্গল দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিবদমান দু’গ্রুপের সংঘর্ষে রমজান আলী ওরফে আকাশ নামের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় পীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল আউয়াল, এসআই আকতার, নজরুল, রিয়াজুল, কনস্টেবল জ্যেতিসহ ৬ পুলিশ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকতারসহ এবং উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২ টার সময় উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খেতাবের পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে আটক করেছে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাপর অপরাধিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আহত অবস্থায় পীরগঞ্জ থানার এসআই নজরুল, এসআই রিয়াজুল এবং প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদারকে গুরুতর আহতাবস্থায় পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ, গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানায়,উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খেতাবের পাড়া পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সম্প্রতি ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। সহকারি শিক্ষকের হুমকিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের স্কুলে যাতায়াত বন্ধ থাকে। সোমবার প্রধান শিক্ষক স্কুলে হাজিরা দিতে যাবেন এমন খবরে আনোয়ারুল গ্রামবাসী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়াটে লোকজন জোগাড় করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। মুলত খেতাবের পাড়া মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের ২টি প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০০৫ সাল থেকে স্থানীয় ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুর সাথে আনোয়ারুলের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। বর্তমানে শহীদুল ইসলাম বাবু ওই দুই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার জানান, ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করি। আনোয়ারুল মাধ্যমিক ও প্রাথমিকে নেতৃত্ব দিতেই সব সময় গন্ডগোলোর পাঁয়তারা করে। আনোয়ারুল গং কমিটি গঠন ঠেকাতে রংপুর জজ কোর্টে মামলা করে। ১১ সেপ্টেম্বর শুনানীর পর ১২ সেপ্টেম্বর আনারুল গং পরাজিত হলে প্রিজাইটিং অফিসার ও উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আরিফুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে বসেই ১৫ সেপ্টেম্বর শহিদুল ইসলামকে বাবুকে সভাপতি করে পুনাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করেন। এদিকে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকে আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের স্কুলে গমনে নিষেজ্ঞা জারি করে। দূর্গাপুজাসহ ১০ দিন ছুটির পর গতকাল সোমবার স্কুল খুললে সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক গ্রামবাসী প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবু কে স্কুলে প্রবেশে বাধা দেবেন মর্মে পুর্বেই ঘোষনা দেয়। পীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল আউয়াল জানান, সকালে উপ্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেন। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। দুপরের পরপর প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাবু ২ টি মোটর সাইকেলযোগে বিদ্যালয়ে আসার পথে আনারুল গংরা ধাওয়া করে। এদের হামলায় প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন আহত হয়। হামলায় ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী ওরফে বাঁশের তৈরী ফলার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছুলে অতর্কিত পুলিশের উপরও হামলা চালানো হয়। এক পর্যায়ে আনারুল গংরা ওসিকে খিলঘুষি মেরে স্কুলকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। এদের হামলায় এস.আই আশরাফুল, এসআই নজরুল, এসআই রিয়াজুল, এসআই আকতার ও মহিলা পুলিশ সদস্য জ্যোতি আকতার এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকতার গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৬ জন কে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম, হরনাথপুর গ্রামের দেলদার হোসেন, সেকেন্দার আলী, মদনখালী গ্রামের সাজু, ভাবনচুড়া গ্রামের হারুন মিয়া, নয়াপাড়া গ্রামের হাজের উদ্দিন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকাবাসী আরও জানান কয়েক দিন ধরে প্রভাবশালী এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুলের পক্ষে কাজ করতে লোকজনকে মদদ দিয়ে আসছিল। রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মধুসুদন ও সহকারি পুলিশ সুপার ডি-সার্কেল কামরুজ্জামান ঘটনাস্থলে পৌছেঁন। এরা জানান, অপরাধিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত এবং নিহত শিশুর লাশ ময়না তদন্তে রংপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।