রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৭০তম জন্মদিনের পরদিন শনিবার বিস্ফোরণে ক্রিমিয়া সেতু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের একমাত্র সংযোগ সেতু এটি। বিস্ফোরণের ঘটনাটি ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের কাজ বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল সোমবার ইউক্রেনজুড়ে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হন। বহু আহত হন। পশ্চিমে লিভিভ থেকে শুরু করে পূর্বে খারকিভ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। ক্রিমিয়া সেতুর ওপর হামলার পাল্টা হিসেবেই যে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, তা গোপন করেননি পুতিন। সেতুতে বিস্ফোরণের বিষয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় পুতিন বলেন, ‘তাদের এ কর্মকাণ্ড দিয়ে কিয়েভ সরকার আসলে নিজেদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পর্যায়ে নিয়ে গেছে এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য।’পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের জবাব না দিয়ে আর ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। যদি সন্ত্রাসী হামলা চালানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে, রাশিয়ার জবাব হবে কঠোর। যে ধরনের হুমকি মোকাবিলা করা হবে, সেভাবে জবাব দেওয়া হবে। এ নিয়ে কারও সংশয়ে থাকা উচিত হবে না।’রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম জগতে কর্মরত ক্রেমলিনপন্থী ব্যক্তিত্বরা এসব হামলার প্রশংসা করেছেন। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এডিটর-ইন-চিফ হচ্ছেন মারগারিতা সিমোনিয়ান। তিনি নিয়মিত টক শোতে অংশ নেন। এর আগে ইউক্রেনীয় স্থাপনায় হামলার পরামর্শ দিয়েছিলেন মারগারিতা। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর প্রবাদের মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি। মারগারিতার প্রবাদের ভাবার্থটা অনেকটা এ রকম, ‘ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না; সবুরে মেওয়া ফলে। যদি তুমি তাড়াহুড়া করো, তাতে কেবল তুমি লোকই হাসাবে আর দ্বিতীয় প্রবাদটি আজকের (সোমবার) সকালটাকেই ব্যাখ্যা করে।’ অর্থাৎ রাশিয়া ধীরে জবাব দিতে পারে, কিন্তু যখন জবাবটা দেয়, সেটা নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ সোমবারের হামলাকে কেবলই সূচনা বলে অভিহিত করেছেন। টেলিগ্রাম চ্যানেলে তিনি লেখেন, ‘প্রথম পর্ব সম্পন্ন হলো। পরবর্তী সময়ে আরও এ ধরনের হামলা হবে।’কোমসোমোলস্কায়া প্রাভদা ট্যাবলয়েডের যুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদক আলেক্সান্দার কোটস টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘আশা করা যায়, এটি প্রতিশোধ গ্রহণে মাত্র একবারের পদক্ষেপ নয়; বরং ইউক্রেন রাষ্ট্রের গভীরে যুদ্ধের একটি নতুন ব্যবস্থা হিসেবে চলবে, যতক্ষণ না রাষ্ট্রটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।’পুতিনের মিত্র চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। তাঁর উদ্দেশে কাদিরভ বলেন, ‘জেলেনস্কি, আমরা তোমাকে সতর্ক করেছি যে (আসল যুদ্ধ) রাশিয়া এখনো শুরুই করেনি। তাই বাচ্চার মতো নালিশ না করে হামলার শিকার হওয়ার আগে পালাও। পশ্চিমাদের দিকে ফিরে না তাকিয়ে দৌড়াও জেলেনস্কি, দৌড়াও।’রাশিয়া টোয়েন্টি ফোর ও রাশিয়া ওয়ান চ্যানেলের প্রতিবেদক ইভজেনি পদুবনি টেলিগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন। এতে কিয়েভের আকাশে অগ্নিকুণ্ডলীর দৃশ্যের সঙ্গে কয়েকজন নারী-পুরুষকে উল্লসিত হয়ে ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা যায়।
ইভজেনি পদুবনি লেখেন, ‘ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলের বুর্শটিনস্কা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত হানা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্রটি শুধু ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে না, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও রোমানিয়ায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।’
নিউজ বিজয়/মোঃ নজরুল ইসলাম